নীল পরী
– দেসা মিশ্র
-অনেক দিন তোর গান শুনিনি রে, আজ মনটা আমার ভালো নেই..শোনাবি আমায় গান করে?
– আমারো মন ভালো নেই রে, কতদিন হল গিটারটা ছুঁয়েও দেখিনি মনে নেই, রঙ তুলি সব পড়ে আছে নিজেদের মতো আমার সাথে তাদের কথা নেই, যেন সব ফুরিয়ে গেছে।
আগে একদিন না গান করলে না আঁকলে আমার মন অস্থির করত ঘুম আসত না।
কিন্তু কি যে হলো?
জানিনা কবে সব ঠিক হবে?
-:আচ্ছা আজ সব মন খারাপগুলোকে সরিয়ে রাখা যায় না অনেক দূরে? আজ শুধু আমরা দু’জন সুখের গল্প করব আজ শুধু দু’জন পদ্ম পাতা হয়ে ভাসবো।
– পরী, তুই সত্যি আমার জীবনের পরু। এক পৃথিবী ফুলের সৌরভ এনে দিয়েছিস তুই।
তোর জাদু কাঠির ছোঁয়া পেয়ে আমার জীবনটা অনেক পাল্টে গেছে। আগে প্রচণ্ড বদ মেজাজ ছিলো আমার প্রতি দিন অনেক রাত করে বাড়ি ফিরতাম, মা বাবার কোনো কথাতেই কোনো ধ্যান ছিল না আমার শুধু একলা আকাশে কাগজ পাখি হয়ে অবাধ্য ছুট দিতাম। এখন যখন তোর ইশারাতে একটু একটু করে নিজেকে গুছিয়ে নিয়েছিলাম টেবিলে সাজানো ফুল দানির মতো, রঙিন ঝাড়বাতির মতো, বাবা মায়ের সব কথা শুনতাম তাদের খেয়ালও রাখতাম ঠিক টাইমে বাড়ি ফিরে আসতাম রাগটাও কমিয়ে নিয়ে ছিলাম অনেক। জানিস ঠিক করেছিলাম আমাদের কথাটা তাদের এবার জানাবো আশীর্বাদ নেবো।
কিন্তু – হঠাৎ সেদিন সন্ধ্যাতে কি নিয়ে যে ওদের তুমুল অশান্তি বেঁধে গেলো এরকম আমি এর আগে কোনো দিনও দেখিনি সেদিন থেকেই দু’জন দু’জনের সাথে কথা বলে না আর। বাড়ির পরিবেশটা পাল্টে গেলো।এখন বাড়িতে থাকতে খুব কষ্ট হয়, একটা ঘরে নিজেকে বন্ধ রাখি। সব শখ নিজে হাতে একটু একটু করে শেষ করতে বসেছি মনে হয় , কিছু ভালোই লাগে না আর। তাইতো এতো দিন পর আর না পেরে তোকে ডাকলাম নদীর ঘাটে।
খুব ভালো করেছিস, আমি ও অনেক দিন ধরেই নানা চিন্তার জট পাকিয়ে নিরুপায় হয়ে পড়েছিলাম।
তোকে দেখা করার কথা বলবো ভেবেও বলতে পারি নি – তুই কি ভাববি সেই ভেবে।
– পাগলি মেয়ে একটা, কেন খারাপ ভাববো?আচ্ছা এখন ছাড় সে সব কথা। আজকের সূর্যাস্তটা আমরা একসাথে দেখব আর প্রতিজ্ঞা করব জীবন পথের প্রতিটা অস্তেই আমরা একই ভাবে সাথে থাকবো আর দু’জন মিলে অপেক্ষা করব সুন্দর একটা সূর্যোদয়ের জন্য। কিন্তু কোনদিন একে অপরের হাত ছাড়ব না আর বিশ্বাসও হারাবো না।
– একদম তাই হবে। অফুরন্ত বিশ্বাস আর ভালোবাসা দিয়ে আমরা একটা এমন বাসা বানাবো যাতে কোনো ঝড়ে আমাদের সে বাসা না ভাঙে। আর আমদের ভালোবাসা দিয়ে মা বাবাকেও আবার আগের মতই এক করে দেবো তারাও ‘লাভ বার্ড’ হবে কি বলিস?
– একদম আমার মনের কথা, তুই আমার আয়না। তোর মাঝেই আমি আমাকে দেখতে পাই অধিক স্বচ্ছ। তুই আমার মনের অনেক ক্লান্তি বোঝা কষ্ট নামিয়ে দিলি তাই তো তোকে এতো ভালোবাসি নিজের চেয়েও বেশি।
– শুধু কথায় ভোলালে হবে না নীল, এবার একটা উপহার চাই দেবে?
-;কি চাই বল? আমার সব কিছু তো তোর, জীবনটাও!
– অনেক দিন তো গুমোট কালো মেঘ, এবার তো দহন মিটিয়ে বৃষ্টি হয়ে মনের ঠোঁট ছুঁয়ে দে…,
একটা গান শোনা এবার…
নীল গান ধরলো… “তুমি রবে নীরবে হৃদয়ে মম”
নীলের ঘাড়ে মাথা রেখে পরী শুয়ে রইলো। তারার স্রোতে তাদের গল্পগুলো জন্ম দিলো এক পৃথিবী সুখ আলোর।
চাঁদের গলে গলে পড়লো নদীর বুকে তাদের পায়ে নরম আদর বুলিয়ে দিলো।
সমাপ্ত